কে না চায় নিজের ঘরে অন্তত একজন পুলিশের লোক থাকুক। পুলিশের ইউনিফর্মে আলাদা একটা ভাব ও মর্যাদা রয়েছে। এই ক্যারিয়ারে আছে চ্যালেঞ্জ, আছে অবিরাম সুযোগ, বৈধপথেই লাখ টাকা আয় সহ নানা সুবিধা অসুবিধা। চলুন আজ জেনে নেয়া যাক সেসব।
পুলিশের এস.আই পদে নিয়োগের বিস্তারিত
পুলিশের এই পদটি সেকেন্ড ক্লাস গেজেটেড অফিসার। সাব-ইন্সপেক্টরকে পুলিশের বাহিনীর মেরুদন্ড বলা হয়। কারণ, তারা ইনভেস্টিগেশন অফিসার হিসাবে প্রায় সকল মামলার তদন্ত করা সহ মাঠ পর্যায়ে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করে। আর নিরস্ত্র মানে যারা মামলার তদন্ত করতে পারবে এবং অস্ত্র বহন করতে পারবে। যা সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী পারবে না।
এস.আই পদে চাকরি পাওয়ার পর কি কি সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়?
১। শুরুতে প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা বেতন + মামলা তদন্ত ভাতা ও টিএ, ডি এ+রেশন ও পোশাক+বিশেষ ইউনিট এর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভাতা।
২। যোগ্যতা থাকলে পদোন্নতি পেয়ে SP/ Addl. SP/ASP পর্যন্ত হওয়ার সুযোগ আছে।
৩। যোগ্যতা থাকলে প্রতিটি ১ বছরের মিশনে ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। সাধারণত চাকরি জীবনে ৩টার বেশি মিশন পাওয়া যায় না।
৪। মিশন বা প্রশিক্ষনের সুবিধার্থে বিনা খরচে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের সুযোগ।
৫। সাধারণ মানুষ থেকে মন্ত্রী-এমপি পর্যন্ত যোগাযোগ ও প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় পর্যন্ত বিচরণ করার সুযোগ।
৫। এখানে চাকরির বৈচিত্র্য আছে। আপনি চাইলে ইউনিফর্ম পরে থানায় ব্যস্ততম জীবন-যাপন করতে পারেন অথবা পুলিশের অন্য ইউনিট-এ সিভিলের মতো এসি রুমে ৯টা-৫টা অফিস করতে পারেন।
৬।পারিবারিক ও সামাজিক নিরাপত্তা।
পুলশের এস.আই পদে চাকরির অসুবিধা গুলো কি?
১। চ্যালেঞ্জিং জব। সর্বদা বিচক্ষণ থাকতে হয়।
২। মাঝে মাঝে চরম বিরূপ পরিবেশে কাজ করতে হয়। আপনার সামান্য ভুলের কারণে অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে।
৩। আপনি সৎ হওয়া সত্বেও, কতিপয় লোক আপনার সমালোচনা করতে পারে।
তবে আশার কথা হচ্ছে-
১। পূর্বে এসআই থেকে ইন্সপেক্টর(অর্থাৎ ওসি) এ প্রমোশন পেতে ১৫/১৬ বছর লেগে যেত। সরকারের আন্তরিকতায় বর্তমানে চাকরির মেয়াদ ৫ বছর ও ইন্সপেক্টরশীপ পাস করলেই প্রমোশন হয়ে যায়।
২। পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর টু আইজিপি পর্যন্ত পদের রাঙ্ক ব্যাজ এক ধাপ উন্নতি করার প্রক্রিয়া চলছে। আশা করি খুব শীঘ্রই হয়ে যাবে।
পুলিশের এস.আই তে নিয়োগ পরীক্ষা কীভাবে হয়?
১ম ধাপঃ শারীরিক পরীক্ষা
২য় ধাপঃ লিখিত পরীক্ষা-২২৫মার্ক:
পরীক্ষা হয় সর্বমোট ৩ দিন।
- প্রথম দিন মনস্তাত্বিক পরীক্ষা-২৫ মার্ক
- দ্বিতীয় দিন বাংলা ও ইংলিশ-১০০ মার্ক
- তৃতীয় দিন গনিত ও সাধারণ জ্ঞান-১০০ মার্ক।
বাংলা রচনা, ভাবসম্প্রসারন, এক কথায় প্রকাশ, বাগধারা ইত্যাদি আসে।
ইংলিশে paragraph, essay, application, grammar etc. থেকে প্রশ্ন হয়।
গনিত লাভ ক্ষতি, সুদ কষা, অংশীদারি, সরল অংকের চ্যাপ্টার গুলো ভালো করে দেখতে পারেন। সাধারন জ্ঞান সাম্প্রতিক প্রশ্ন গুলো একটু দেখবেন। মনে রাখবেন, সাধারণ জ্ঞান অবশ্যই written question হবে।
৩য় ধাপঃ ভাইভা-১০০ মার্ক।
৪র্থ ধাপঃ মেডিকেল টেস্ট ও ভেরিফিকেশন।
সকল পরীক্ষা সফলতার সহিত পাস করলে প্রশিক্ষণ ও নিয়োগের জন্য চূড়ান্তভাবে মনোনীত হবেন।
পুলিশের কনস্টেবল পদে কীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়?
পুলিশ কনস্টেবল পদে আবেদনের যোগ্যতা কি?
কনস্টেবল পদের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি শারীরিক যোগ্যতা ও থাকতে হবে।অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। আর শারীরিক যোগ্যতার ক্ষেত্রে সাধারণ কোটার পুরুষ প্রার্থীদের জন্য উচ্চতা কমপক্ষে ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি এবং নারী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ৫ ফুট ২ ইঞ্চি হতে হবে।আর বুকের মাপ পুরুষ প্রার্থীদের স্বাভাবিক অবস্থায় ৩১ ইঞ্চি ও সম্প্রসারিত অবস্থায় ৩৩ ইঞ্চি হতে হবে।মুক্তিযোদ্ধা ও উপজাতীয় কোটার ক্ষেত্রে শারীরিক যোগ্যতার ভিন্নতা।
কনস্টেবল পদে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি কেমন হবে?
প্রতিটি জেলায় প্রথমে কাগজপত্রসহ উপস্থিত হয়ে বিধি মোতাবেক শারীরিক মাপ এবং শারীরিক পরীক্ষায় (দৌড়, রোপিং ও জাম্পিং ইত্যাদি) অংশ নিতে হবে।সেখানে বাছাই প্রক্রিয়া উত্তীর্ণরাই লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য বিবেচিত হবেন।
পুলিশের লিখিত পরীক্ষায় ভালো করতে হলে কি করতে হবে?
সাধারণত বাংলা, ইংরেজি, সাধারণগণিত ও সাধারণ জ্ঞান থেকে লিখিত পরীক্ষায় প্রশ্ন হবে।
প্রার্থীদের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর পাঠ্যবইগুলো আবার ভালোভাবে ঝালিয়ে নিতে হবে।মূলত সেখান থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে। সাধারণ জ্ঞান পরীক্ষার জন্য বেশি প্রস্তুত করতে হবে।কারণ দেখা যায় অনেকে সাধারণ জ্ঞানে ভালো না হওয়ার কারণে বাদ পড়ে যান।তাই সাধারণজ্ঞানে ও জোর দিতে হবে।তবে প্রস্তুতির কোনো বাধাধরা নিয়ম নেই। প্রার্থীরা নিজ নিজ জেলার পরীক্ষার দিন ও সময় অনলাইনে বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইট লিংকে গিয়ে জানতে পারবেন।
উত্তীর্ণ প্রার্থীদের পরবর্তী প্রস্তুতি/করণীয় কি?
প্রার্থীদের সংশ্লিষ্ট।জেলার পুলিশসুপার পরবর্তী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রবেশপত্র ইস্যুকরণসহ লিখিত পরীক্ষা গ্রহণের কেন্দ্রের স্থান নির্ধারণ করে প্রার্থীদের অবহিত করবেন।লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ২০ নম্বরের মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হবে।পরীক্ষায় আলাদাভাবে মোট নম্বরের ৪৫ শতাংশ নম্বর পেতে হবে।প্রাথমিকভাবে বাছাইকরা প্রার্থীদের জেলা পুলিশ সুপার কর্তৃক সরবরাহকরা আবেদনফরম পূরণ করে জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে মৌখিক পরীক্ষায় আত্মবিশ্বাস বেশি জরুরি।যা জানবেন তারই সঠিক উত্তর দেয়া উচিত। না পারলে , কোনো কিছুর ভুল উত্তর দেয়া ঠিক নয়।
উত্তীর্ণ প্রার্থীদের পরে আর কী কী পরীক্ষা নেয়া হবে?
ভেরিফিকেশন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষায় যোগ্য প্রার্থীদের প্রাথমিকভাবে প্রশিক্ষণের জন্য মনোনীত করা হবে।প্রার্থীদের প্রশিক্ষণকেন্দ্রে যোগ দেয়ার পর পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত পুনরায় বাছাই কমিটি কর্তৃক অন্যান্য তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর চূড়ান্তভাবে প্রশিক্ষণের সুযোগ পাওয়া প্রার্থীদের ছয় মাস মেয়াদি মৌলিক প্রশিক্ষণে অংশ নিতে হবে।
কি কি বিধিনিষেধ করা হয়েছে
প্রার্থী নিজ জেলা ব্যতীত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
পুলিশের চাকরি পাওয়ার পর কি কি সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে?
প্রশিক্ষণ শেষ করার পর বিধি মোতাবেক প্রাপ্য অন্যান্য বেতন-ভাতা সহ পুলিশবাহিনীতে কনস্টেবল পদে নিয়োগ দেয়া হবে। দুইবছর শিক্ষানবিশ হিসেবে সফল ভাবে দায়িত্ব পালনকরার পর প্রার্থীদের কনস্টেবল পদে স্থায়ী করা হবে।
চূড়ান্তভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রার্থীরা চাকরির সময়ে বিনামূল্যে পোশাক সামগ্রী, ঝুঁকিভাতা, চিকিৎসাসুবিধা এবং নিজ ও পরিবারের নির্ধারিত সংখ্যক সদস্যের প্রাপ্যতা অনুযায়ী পারিবারিক রেশন সামগ্রী স্বল্পমূল্যে ক্রয় করতে পারবেন। এছাড়া প্রচলিত নিয়মানুযায়ী উচ্চতর পদে পদোন্নতি খুব ভালো করলে মিশনে যেতে পারবে সহজে।
জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে যোগদানের ও সুযোগ পাবেন।