পুলিশ কনস্টেবল এর কাজ কি? যোগ্যতা, বেতন, পদোন্নতি এবং আবেদন প্রক্রিয়া

মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ পুলিশ নামে সংগঠিত হয়। বাংলাদেশ পুলিশ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের পুলিশ বাহিনীর মতো আইন শৃঙ্খলা রক্ষা, জনগনের জানমাল ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান, অপরাধ প্রতিরোধ ও দমনে প্রধান ভুমিকা পালন করে থাকে। মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ পুলিশের ট্রাডিশনাল চরিত্রে বিরাট পরিবর্তন এনে দিয়েছে। শুধু আইন পালন আর অপরাধ প্রতিরোধ বা দমনই নয় দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশ পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে।

বাংলাদেশ পুলিশ কনস্টেবল এর কাজ কি?

বাংলাদেশ পুলিশ বাংলাদেশের একমাত্র আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা। সংস্থাটি বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। বাংলাদেশ পুলিশের প্রধান অধিকর্তাকে বলা হয় মহা পুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি)।

পুলিশ কনস্টেবল এর কাজ হলো জনগনের সেবা করা, দেশের মানুষের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য কাজ করা। সেবাই ধর্ম পুলিশ কন্সেটবল এর মূখ্য বিষয়। আমার জানা মতে একজন কনস্টেবল কে একটি জায়গায় পোস্টিং দেওয়া হয় , আর সেইখানের জেলের ভিতর যে সব লোক বন্দি থাকে তাদের দেখাশুনা করতে হয়।

চুরি-ডাকাতি রোধ, ছিনতাই প্রতিরোধ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ইত্যাদি সমাজ বিরোধী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধসহ বিভিন্ন জনসভা, নির্বাচনী দায়িত্বে বাংলাদেশ পুলিশ অংশগ্রহণ করে থাকে। বাংলাদেশ পুলিশে পুরুষ-নারী উভয়ই চাকুরি করছে।

সর্বপরি তাঁকে দেশ ও জাতীর কল্যানে কাজ করতে হয়। দেশ ও জাতীর সেবা করাই তার মূল কাজ।

বাংলাদেশ পুলিশ কনস্টেবল এর শিক্ষাগত ও অন্যান্য যোগ্যতা কি

গত এক দশকে জঙ্গীবাদ দমন এবং নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ পুলিশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। পুলিশের সদস্যরা তাদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা আর পেশাদরিত্ব দিয়ে অপরাধ মোকাবিলায় প্রতিনিয়ত সৃজনশীলতার পরিচয় দিচ্ছেন। ঘুষ দুনীর্তির কারণে একসময়ে অভিযুক্ত এই বাহিনী তার পেশাদরিত্ব আর জনগনের প্রতি দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়ে জনগনের গর্বের বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।

শিক্ষাগত যোগ্যতা

এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় কমপক্ষে জিপিএ ২.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণরা পদটিতে আবেদন করতে পারবেন। বয়স: নির্দিষ্ট তারিখে সাধারণ ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের সন্তান বা অন্যান্য কোটার প্রার্থীদের বয়স ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে হতে হবে।

আবেদন করার প্রক্রিয়া

আগ্রহী প্রার্থীরা অনলাইনে ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ে যেয়ে পুলিশের এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কনস্টেবল পদে আবেদন করতে পারবেন।

বয়স সীমা

বয়স কিন্তু পুলিশ কনস্টেবল চাকরি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনারা বয়স মিলিয়ে দেখবেন তারপর আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করবেন। আবেদনের জন্য প্রার্থীদের বয়স হতে হবে ২৮ ফ্রেব্রুয়ারী ২০২২ তারিখে ১৮ থেকে ২০ বছর।

শারীরিক যোগ্যতা

পুলিশ কনস্টেবলের প্রাথমিক বাছাই প্রক্রিয়া অবস্থায় দেখা যায়, অনেক প্রার্থী সঠিক উচ্চতা এবং সঠিক ওজনের কারণে অনেকেই বাদ পড়ে যায়। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক;

সাধারণ, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের সন্তান ও অন্যান্য কোটার পুরুষ প্রার্থীদের জন্য উচ্চতা নিম্ন ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি এবং বুকের মাপ স্বাভাবিক অবস্থায় ৩১ ইঞ্চি ও স্ফীত অবস্থায় ৩৩ ইঞ্চি হতে হবে। তবে উপজাতীয় এবং মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুরুষ প্রার্থীদের জন্য উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি এবং বুকের মাপ স্বাভাবিক অবস্থায় ৩০ ইঞ্চি ও স্ফীত অবস্থায় ৩১ ইঞ্চি হতে হবে। নারী প্রার্থীদের জন্য উচ্চতা ৫ ফুট ৪ বা ২ ইঞ্চি হতে হবে, তবে উপজাতীয় এবং মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নারী প্রার্থীদের জন্য উচ্চতা নিম্ন ৫ ফুট ২ ইঞ্চি হতে হবে। প্রার্থীদের ওজন উচ্চতা ও বয়স অনুযায়ী নির্ধারণ করা হবে।

বেতন ভাতা

ছয় মাসের প্রশিক্ষণ চলাকালে পাওয়া যাবে পোশাক, থাকা-খাওয়া ও চিকিৎসা সুবিধা। পাশাপাশি প্রশিক্ষণকালীন সময়ে প্রতি মাসে প্রশিক্ষণ ভাতা দেয়া হবে। প্রশিক্ষণ শেষে নিয়োগ প্রাপ্তদের ২০১৫ সালের বেতন স্কেলের ১৭তম গ্রেড অনুযায়ী বেতনক্রম হবে ৯০০০-২১৮০০ টাকা।

পুলিশ কনস্টেবল পদে কীভাবে নির্বাচন করা হয়?

শারীরিক মাপ ও শারীরিক পরীক্ষা নেওয়া হবে প্রার্থীর নিজ জেলার পুলিশ লাইনস ময়দানে। নির্ধারিত তারিখে উপস্থিত হতে হবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ। চাকরি প্রার্থীদের সঙ্গে রাখতে হবে কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র। শারীরিক মাপ পরীক্ষায় বয়স, উচ্চতা, বুকের প্রস্থ ও ওজন ঠিক আছে কি না যাচাই করা হবে। এরপর অংশ নিতে হবে দৌড়, জাম্পিং, রোপ ক্লাইমিং, পুশ-আপ, ড্রাগিং-এ।

পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে জেলার পুলিশ সুপার পরবর্তী পরীক্ষার জন্য প্রবেশপত্র ইস্যু করবেন। একই সঙ্গে তিনি লিখিত পরীক্ষার কেন্দ্র নির্ধারণ করে প্রার্থীদের জানিয়ে দেবেন। লিখিত, মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষার সময় প্রবেশপত্র সঙ্গে আনতে হবে ।

শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে নির্দিষ্ট দিনে বসতে হবে লিখিত পরীক্ষায়। বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ গণিত ও সাধারণ বিজ্ঞানের উপর ৪৫ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা দিতে হবে।

লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নির্ধারিত তারিখে মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে। এতে থাকবে ১৫ নম্বর। ব্যক্তিগত পরিচিতিমূলক প্রশ্নের পাশাপাশি প্রার্থীর মানসিক দক্ষতা, মূল্যবোধ বিচারের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করা হয় এ পরীক্ষায়।

একজন পুলিশ কনস্টেবল এর বেতন ভাতাদি কত?

নতুন নিয়োগ প্রাপ্ত একজন্য পুলিশ কনস্টেবল ১৭তম গ্রেডে বেতন পেয়ে থাকে। বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য ভাতা বিধি মোতাবেক পেয়ে থাকেন।

মূল বেতন ৯০০০ (স্কেল ৯০০০-২১৮০০)

বাড়ি ভাড়া সর্বনিম্ন ৫০% হারে ৪৫০০ টাকা

ধোলাই ও চুলকাটা ভাতা মাসিক-৮৫ টাকা

ট্রাভেলিং এলাউন্স মাসিক সর্বোচ্চ ২০০ টাকা।

চিকিৎসা ভাতা-১৫০০ টাকা মাসিক

উৎসব ভাতা, ভ্রমণ ভাতা বিধি মোতাবেক।

আনুমানিক সর্বমোট মাসিক ১৫,২৮৫ টাকা।

প্রতিবছর মূল বেতনের সাথে ৫% যোগ হবে । রেশন সুবিধা তো আছেই ।

বাংলাদেশ পুলিশ কনস্টেবল এর পদোন্নতি কীভাবে হয়?

একজন কনস্টেবলের চাকুরির বয়স ০৩ বছর পূর্ণ হলে এবং চাকুরী কনফার্ম হলে নায়েক পদে পদোন্নতি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। আর চাকুরির বয়স ৬ বছর পূর্ণ হলে এএসআই হিসেবে পদোন্নতি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।

পদোন্নতির পদ্ধতি

কনস্টেবল থেকে নায়েক পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে সার্ভিস বই, প্যারেড, মাঠ পরীক্ষার মাধ্যমে নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে নির্দিষ্ট সংখ্যক জনবলের বিপরীতে পদোন্নতি লাভ করে থাকেন। আর এএসআই পদের জন্য প্রিলিমিনারি হিসেবে প্রথমে আইন বিষয়ক ৫০ নাম্বারের নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষায় পাস করার পর পুস্তকসহ ও পুস্তক ব্যতীত লিখিত আইন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। এরপর প্যারেড পরীক্ষা ও ভাইভা অনুষ্ঠিত হয়৷ এভাবে নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে নির্দিষ্ট জনবলের বিপরীতে পদোন্নতি পেয়ে থাকে। একজন কনস্টেবল পদোন্নতি পেয়ে এসপি পর্যন্ত হতে পারেন।

পুলিশ সম্পর্কিত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা এবং উত্তর

পুলিশের নায়েকের বেতন কত?

বাংলাদেশ পুলিশের সর্বনিম্ন পদ কনস্টেবল তারপর পদোন্নতি পেয়ে নায়ক হয় এবং ৯৪৫০ টাকা বেসিক। নায়েক এর পর পদোন্নতি হয় এএসআই।

একজন পুলিশ কনস্টেবল-এর দিনে কত ঘন্টা ডিউটি করতে হয়?

নূন্যতম ৮-৯ ঘণ্টা অবশ্যই। তবে প্রায়ই ১৪-১৫ ঘন্টা ডিউটি থাকে। প্রতিকূল পরিবেশেও তাদের ডিউটি করতে হয়।

পুলিশের এস আই এর সর্বোচ্চ কোন পদ পর্যন্ত পদোন্নতি হয়?

প্রমোশন পেয়ে ডিআইজি ও হবার রেকর্ড আছে, যদিও এখন সে সম্ভাবনা খুব কম।

পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর-এর বেতন স্কেল কত? এবং কোন গ্রেড অফিসার?

সরকারের দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা এবং বেতন স্কেল ১০ম গ্রেডের।

পুলিশের এএসপির বেতন কত?

একজন এএসপি ১টা ইনক্রিমেন্ট দিয়ে শুরু করে চাকরি। তাই তার বেতন হয় ২৩০০০ টাকা। আর রেশন পায়,চিকিৎসা ভাতা,বাড়ি ভাড়া,সন্তান পড়াশোনা করলে শিক্ষা ভাতা,আর বিভিন্ন ব্রান্ঞ্চে চাকরি করলে ডেইলি ডিউটি ভাতাও মেলে,ঝুকি ভাতা ও থাকে আবার মাসিক সেরা কর্মকর্তা হলেও একটা ভাল এমাউন্ট দেয়।শুধু বেতন বললাম অন্য সুযোগ সুবিধা নাই বলি।

বাংলাদেশ পুলিশের ওসি’র বেতন কত?

সাধারণত থানার ওসি বা অফিসার ইনচার্জ হিসাবে একজন ইন্সপেক্টর বা পরিদর্শক পদায়ন হন। একজন পরিদর্শক নবম গ্রেডের বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন পান। সাবেক প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তাদের বেতন স্কেল বর্তমানে নবম গ্রেড থেকে শুরু হয়। যেমন একজন বিসিএস অফিসার চাকুরীতে যোগদান করে নবম গ্রেডের বেতন স্কেল থেকে বেতন পান। গুগুলে সার্চ দিলে কোন গ্রেডের বেতন স্কেল কত তা পেয়ে যাবেন।

একজন আই.জি. পি বেতন কত?

মুল বেতন স্কেল (বেসিক)৮২০০০/- (সিনিয়ার সচিব পদমর্যাদা)। বেতনে এই বেসিকের সাথে ৪০-৬০% বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও আরো অন্যান্য ভাতা সংযুক্ত হয়।

শেষ কথা

আশা করছি সম্পূর্ণ উধৃতি টি পড়ে বুঝতে পেরেছেন বাংলাদেশ পুলিশ কনস্টেবল এর কাজ কি এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা, কি কি ধাপে পদোন্নতি এবং কীভাবে আবেদন করতে হবে। এই পর্যন্ত পড়ে আসার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধনবাদ। জানার অজানে কিছু ভুল তথ্য হয়ে কমেন্টে সঠিক তথ্য জানানোর অনুরোধ রইল।

Leave a Comment