ফার্মাসিউটিক্যালস চাকরি কেমন? নতুনদের চাকরির সুযোগ সবচেয়ে বেশি

আমাদের দেশে বিষয় ভিত্তিক চাকরি পাওয়া খুবই কঠিন। কিন্তু বিজ্ঞানের বিষয় গুলোর মধ্যে রসায়নে যারা অনার্স-মাস্টার্স করেছেন তাদের জন্য বিষয়টি ভিন্ন। দেশে রসায়নে পড়ুয়াদের জন্য মোটামুটি ভালোই চাকরি রয়েছে।  ফার্মাসিউটিক্যালসের সংখ্যাই প্রায় ২৫০টি। এছাড়া গার্মেন্টস সেক্টরে ইটিপি, ডাইং, বা কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিও কম না। এখন তো প্রতিটি ফ্যাক্টরির জন্য ইটিপি করা বাধ্যতামূলক। আমার পরিচিত রসায়নের কোন ছাত্রছাত্রীদের পাশ করার পরে বসে থাকতে দেখিনি। পাশ করে বের হয়েই হয় ওষুধ কোম্পানি চাকরি নয়তো কেমিক্যাল কোম্পানি চাকরিতে ঢুকে পড়ে। 

ফার্মাসিউটিক্যালস চাকরিতে কাজের সুযোগ এখন কেমন?

বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানিগুলোর প্রসার দিন দিন বাড়ছে। এই শিল্পের অন্যতম চালিকাশক্তি হচ্ছেন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ বা মেডিকেল প্রমোশন অফিসার। বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে বা ফার্মেসিতে ঘুরে ঘুরে তাঁরা প্রতিষ্ঠানের পণ্য পরিচিত করান। চ্যালেঞ্জিং পেশা হিসেবে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ বেশ স্বীকৃত। সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবেও এই পেশার মর্যাদা ভালো।

দেশে কাজের ক্ষেত্র হিসেবে ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি দ্বিতীয় বৃহত্তম সেক্টর। দেশে আড়াই শতাধিক ওষুধ কম্পানি আছে। প্রতিনিয়ত এ সেক্টরের বাজার ও চাহিদা বাড়ছে। প্রতিবছর ১৫ শতাংশ হারে ওষুধের বাজার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বলতে গেলে, দেশের লোকাল মার্কেটে প্রতিবছর ২০ থেকে ২২ হাজার কোটি টাকার ওষুধ বিক্রি হয়। তাই কাজের সুযোগও দিন দিন বাড়ছে। লোকাল মার্কেটে চাহিদা পূরণ করে যেসব প্রতিষ্ঠান (যেমন—স্কায়ার, বেক্সিমকো, অপসোনিন, একমি, এসিআই, হেলথ কেয়ার) রপ্তানি করছে, স্বাভাবিকভাবেই সেসব প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগটা সবচেয়ে বেশি।

আগে লক্ষ্য ঠিক করুন

এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের দেশের স্টুডেন্টদের মাস্টার্স শেষ হওয়া মাত্র চাকরির পেছনে ছুটতে হয়। ফ্যামিলির চাপ, সামাজিক চাপ ইত্যাদির জন্য অন্য কোন দিকে মনোযোগ দেয়ার সময় থাকে না।

৯০% স্টুডেন্টদের লক্ষ্য থাকে সরকারি চাকরির। সরকারি চাকরির জব সিকিউরিটি ভালো, সামাজিক মর্যাদা আছে কিন্তু পাওয়া কঠিন। কাজেই যদি আপনার লক্ষ্য থাকে সরকারি চাকরি করার তাহলে বলব ওষুধ কোম্পানির চাকরি আপনার জন্য না। এখানে একবার ঢুকলে সরকারি চাকরির জন্য প্রিপারেশন নিতে পারবেন না। সময়ই পাবেন না।

আবার সরকারি চাকরির জন্য ট্রাই করতে করতে যদি আপনার বয়স ত্রিশ ক্রস করে যায় তাহলে ওষুধ কোম্পানির চাকরি পাওয়া আপনার জন্য কঠিন হবে। এখানে শুরুর দিকে যে ধরনের কাজ করতে দেয়া হয় সে-ধরনের কাজে ইয়াং কম বয়সী পোলাপান লাগে। যারা কথা শুনবে, ঘাউড়ামি করবে না। ওষুধ ফ্যাকটরিতে যা কিছু করা হয় সবটাই নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে করা হয়। এখানে ব্যক্তিগত পছন্দ বা অপছন্দের কোন জায়গা নেই। একই কাজ দিনের পর দিন করবেন। ফ্রেশ ছেলে মেয়ে হলে তাদের এই জিনিসটা সহজে বোঝানো যায়। 

ফার্মাসিস্ট হিসেবে ফার্মা সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ কেমন?

বাংলাদেশের ফার্মা সেক্টরে ফার্মাসিস্টরা দু’টি দিকে কাজ করে ঃ

১। কর্পোরেট সাইডে

২। প্ল্যান্ট বা ফ্যাক্টরিতে।

ফার্মেসি এমন এক ধরণের শিক্ষা ব্যবস্থা যেখানে একজন ফার্মাসিস্টের জ্ঞানের পরিধি থাকে অনেক বিস্তৃত তথা মেডিকেল, মার্কেটিং, কম্পিউটার সহ আধুনিক বৈশ্বিক যুগে যা কিছু প্রয়োজন তা সব-ই। যেকোনো ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি পরিচালনা থেকে শুরু করে কাজ বাস্তবায়নের দিক থেকে ফার্মাসিস্ট অদ্বিতীয় ও অনন্য। ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোতে ফার্মাসিস্টরা প্রডাক্ট ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট, ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট, ট্রেনিং ডিপার্টমেন্ট, কমার্শিয়াল ডিপার্টমেন্ট / সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট, প্রডাক্ট ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট, প্রডাকশন ডিপার্টমেন্ট, কোয়ালিটি কন্ট্রোল ডিপার্টমেন্ট, কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স ডিপার্টমেন্ট, টেকনিক্যাল সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্ট, প্ল্যানিং ডিপার্টমেন্ট, সেলস্ সাপোর্ট ডিপার্টমেন্ট, রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্সসহ অন্যান্য ডিপার্টমেন্টে কাজ করছে।

ফার্মাসিউটিক্যালস প্রতিনিধিদের কাজ

যোগদানের পরই সরাসরি কাজে পাঠানো হয় না। প্রথমে দুই থেকে তিন মাস মেয়াদি একটি প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নিতে হবে। নিয়োগকর্তা কোম্পানি নিজেরাই এ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে। এখান থেকে প্রোডাক্ট সম্পর্কে ধারণা পেয়েই পরবর্তীতে কাজ করতে হয়। মেডিকেল প্রতিনিধিদের কাজ হলো প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। প্রত্যেক প্রতিনিধির জন্য এলাকা নির্ধারিত থাকে। নির্দিষ্ট এলাকার ডাক্তারদের সাথে সাক্ষাৎ করাই তার কাজ। ডাক্তারদের চেম্বারে উপস্থিত হয়ে একজন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভের কাজ কি হবে তা আগেই অফিস থেকে ধারণা দেয়া হয়। সে অনুযায়ী কোম্পানির ওষুধের গুণাগুণ ডাক্তারদের সামনে বিস্তারিত তুলে ধরেন তারা। অধিকাংশ মেডিকেল প্রতিনিধির কাজ প্রত্যেক সকালে হাসপাতালে উপস্থিত হওয়া। বিকালে ডক্টরস পয়েন্ট ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডাক্তারদের চেম্বারে উপস্থিত হওয়া। সারাদিনের কাজ পরের দিন সকালে অফিসের সংশ্লিষ্ট বিভাগে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বুঝিয়ে দেয়া।

ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে তরুণদেরও অনেক দূরদর্শী হতে হয়; সুদূর প্রসারী মনোভাব ও চিন্তা ছাড়া এই সেক্টরে ভালো করা যায়না। বিশেষ করে সেলস প্রফেশনে ভালো করলে খুব দ্রুত সময়ে ক্যারিয়ারের সফলতার মুখ দেখতে পাওয়া যায়।

শিক্ষাগত যোগ্যতা

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ বিভাগ) অঞ্জন কুমার পাল জানান, বিজ্ঞান বিষয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য এই পেশা উপযুক্ত। তবে অন্য বিষয় পড়ুয়া তরুণেরাও বর্তমানে এই পেশায় আসছেন। উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতকে বায়োলজিক্যাল বিষয়গুলো থাকলে তাঁদের পক্ষে সাফল্য পাওয়া তুলনামূলক সহজ। নিয়োগদাতারা জানিয়েছেন, বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকেও নিয়োগ দিচ্ছে। অভিজ্ঞ লোকের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা কিছুটা শিথিলযোগ্য বলে জানা গেছে।

ক) শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অধিকাংশ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানী ন্যূনতম গ্রাজুয়েশান করা এবং অন্ততঃপক্ষে এইচ.এস.সি. পর্যন্ত বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে অধ্যয়ন করেছেন এমন প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

খ) অন্যান্যঃ

অধিক পরিশ্রমী হতে হয়

Career Oriented হতে হয়

উদ্যমী ও সৃজনশীল হতে হয়

মেডিকেল শব্দাবলী সহ ইংরেজী লিখতে, পড়তে ও বলতে পারতে হয়

Communicative ও Proactive হতে হয়

কাজের প্রতি Sincere, Honest ও Dedicated হতে হয়।

ওষুধ কোম্পানির চাকরির জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়া আর কি কি যোগ্যতা লাগে

বর্তমানে যেকোনো চাকরির পূর্বশর্ত হল কম্পিউটার চালানো জানতে হবে। বিশেষ করে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড এবং এক্সেল। প্রতিটি সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এই দুইটা সফটওয়্যার ছাড়া কোনভাবেই চলতে পারবে না। কাজেই নিজের কম্পিউটার যদি নাও থাকে তাহলে বন্ধুদের ল্যাপটপ/ডেক্সটপ যাই থাকুক না কেন লজ্জার মাথা খেয়ে শিখে নেবেন। তাছাড়া প্রতিটি কলেজে কম্পিউটার ল্যাব আছে। আড্ডাবাজি না করে সপ্তাহে তিন দিন এক ঘন্টা সময় ব্যয় করুন কম্পিউটার শিখতে।

আমার রেজাল্ট খারাপ, এতে কি কোন সমস্যা হবে

ভালো রেজাল্টের কদর সব সময় ছিল, আছে এবং থাকবে। কিন্তু ফার্মাসিউটিক্যালস বা অন্য যেকোনো ক্যামিকেল কোম্পানির চাকরিতে রেজাল্ট কোন ফ্যাক্টর না। এমনকি ভালো রেজাল্টধারীদের অনেক সময় নিয়োগ দেয়া হয় না। কেননা, তারা দ্রুত অন্য চাকরিতে চলে যাবে। কাজেই রেজাল্ট নিয়ে ভাবাভাবির কিছু নেই। আমার জানা মতে এস কে এফ ফার্মা ছাড়া আর অন্য কোন ফার্মা রেজাল্ট নিয়ে মাথা ঘামায় না।

মেয়েদের ফার্মাসিউটিক্যালস এ চাকরির সম্ভাবনা কেমন?

বর্তমানে এই পেশায় যুক্ত হচ্ছেন মেয়েরা। মোস্তফা আহসান বলেন, মেয়েদের জন্য এই পেশা তুলনামূলক কিছুটা কঠিন হলেও এখন অনেকে এই পেশায় আসছেন। বিশেষ করে নারী চিকিৎসকদের কাছে মেয়েরা গেলে তাঁরা ভালোভাবে গ্রহণ করেন। আর মেয়েরাও এতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা

এই পেশার একটি বিশেষ দিক হলো কাজের যোগ্যতার ওপর আয় নির্ভর করে। যিনি বেশি যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারবেন, তিনি তত বেশি বেতন পান। এসকেএফের মহাব্যবস্থাপক মোস্তফা আহসান জানান, রিপ্রেজেন্টেটিভদের প্রাথমিক বেতন ১০ থেকে ১৮ হাজার টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। চাকরিক্ষেত্রে একেবারে নতুন বা ফ্রেসার প্রার্থীদের এখানে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে বেশি সুযোগ দেওয়া হয়। ফ্রেসাররা ‘এক্সিকিউটিভ অফিসার’ হিসেবে নিয়োগ পায়।

এক্সিকিউটিভ অফিসার, ফার্মাসিস্ট, কেমিস্ট, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারদের শুরুতেই বেতন ধরা হয় ২৮ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এ ছাড়া, কাজের দক্ষতার ওপর প্রতি বছর ১০ থেকে ২৫ শতাংশ বেতন বাড়ে। সঙ্গে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা তো আছেই।

এ ছাড়া মাঠ পর্যায়ে কাজের জন্য আলাদা খরচ দেওয়া হয়। লক্ষ্য পূরণের ওপর তাঁরা বিশেষ সুবিধা পান। এ ছাড়া তাঁদের যাতায়াতের জন্য মোটরসাইকেল দেওয়া হয়। বর্তমানে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিতে রিপ্রেজেন্টেটিভদের বছরে দুই থেকে পাঁচটি পর্যন্ত বোনাস দেওয়া হয়। এই খাতে রিপ্রেজেন্টেটিভ থেকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হওয়ার উদাহরণ আছে।

প্রাথমিকভাবে নিয়োগ পাওয়ার পর রিপ্রেজেন্টেটিভ থেকে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে পদোন্নতি পাওয়া যায়। এরপর ধাপে ধাপে এরিয়া ম্যানেজার, সিনিয়র এরিয়া ম্যানেজার, সেলস ম্যানেজার, সিনিয়র সেলস ম্যানেজার থেকে হেড অব সেলস ম্যানেজার হওয়ার সুযোগ আছে।

ফার্মা জবের সমস্যা কোথায়

কাজের ধরনঃ ফার্মাসিউটিক্যালসের সব কাজ নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে করতে হয়। এই নিয়ম গুলো লিখিত থাকে। প্রতিদিন, প্রতিটি কাজ করতে গেলে এই নিয়ম গুলো দেখে দেখে করতে হয়। এর বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। ধরেন, নিয়মে আছে বোতল দশবার ঝাকাতে হবে। আপনি দেখলেন যে দুইবার ঝাকালেই মিশে যায় তারপরও আপনাকে দশবারই ঝাকাতে হবে। এটাই প্রধান সমস্যা। অনেকেই এটা করতে চায় না। না চাইলেই সমস্যার শুরু। কেউ যদি আপনাকে নাও দেখে তারপরও এটা আপনাকে করতেই হবে। নিয়ম ১০০ তে ১০০ ফলো করতে হয়। এটা মানুষের জন্য মানা কঠিন!

শিফটিং ডিউটিঃ অবশ্যই শিফটিং ডিউটি করতে হবে। মর্নিং শিফট সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা, বিকেলের শিফট দুপুর ২টা থেকে রাত ১০টা, রাতের শিফট রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত।

অভারটাইম এবং কাজের প্রেশারঃ অভারটাইম বাধ্যতামূলক (তবে ওভারটাইমের বিল পাবেন), কাজের প্রেশার কখনো কমে না।

অডিটঃ ফার্মাসিউটিক্যালসের জবের সবচেয়ে প্যারাদায়ক বিষয়। এখানকার অডিট হয় খুব কড়াকড়ি। সবাই অডিটর কে বাঘের মত ভয় পায়। অডিটের সময়টা খুবই চাপে থাকতে হয়। আপনি যদি যেকোনো ফার্মাসিউটিক্যালসের কোন এমপ্লয়িকে জিজ্ঞেস করেন তার জবের সমস্যা কোথায়? বলবে অডিটের সময়টা। যত কাজ দেন করে দিতে রাজি আছে কিন্তু অডিটের প্যারা নেয়া কঠিন হয়ে যায়।

সিভিতে কী কী দেখা হয়?

সাধারণত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিটি পদের জন্য যথাযথ শিক্ষাগত যোগ্যতা, সিজিপিএ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অভিজ্ঞতা, বয়স উল্লেখ থাকতে হয়।

প্রার্থীদের সিভিতে এসব তথ্য ঠিকঠাক আছে কি না, প্রতিষ্ঠানের শর্তগুলো পূরণ হলো কি না—এসব বিষয়ই প্রাথমিকভাবে দেখা হয়।

অর্থাত্ সিভি যদি বিজ্ঞপ্তির সব শর্ত মেনে করা না হয়, তবেই আবেদন বাতিল করা হয়। আবেদন বাছাই করে শর্টলিস্ট করা হয়, শুধু তাঁরাই লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পান। 

পরীক্ষার ধরন কেমন?

ফ্রেশারদের নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রথমে ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা নিয়ে থাকে। এই পরীক্ষায় বিষয়ভিত্তিক  প্রশ্নে ৬০ আর জেনারেল অংশে ৪০ নম্বর। জেনারেল অংশে সাধারণত ‘আইকিউ টেস্ট’ আকারে প্রশ্ন থাকে। এই পরীক্ষায় পাশ করা প্রার্থীদের পর্যায়ক্রমে দুটি ভাইভা বোর্ডে অংশ নিতে হয়। দুটো বোর্ডে আলাদা আলাদা সদস্য। প্রথম ভাইভা বোর্ডে প্রার্থী নির্বাচিত হলে দ্বিতীয় ভাইভার জন্য ডাকা হয়। পরে চূড়ান্ত নির্বাচন। মেধাবী ও যোগ্য প্রার্থী দেখেই প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়োগ দেওয়া হয়।

ভাইভায় কি কি বিষয় দেখা হয়?

ভাইভা বোর্ডে সাধারণত কমিউনিকেশন স্কিল, অ্যাডভান্সড নলেজ, ম্যাচিউরিটি ও লজিক্যাল টার্ম, চাকরি করার ইচ্ছা আছে কি না, অ্যাটিচ্যুড কেমন, টেকনিক্যাল নলেজ টেস্ট করা হয়।

এ ছাড়া কিছু সিমুলেশন টেস্ট, কিছু সাইকো মেট্রিক টেস্ট করা হয়। টেকনিক্যাল পদের ক্ষেত্রে ব্যাবহারিক পরীক্ষা নেওয়া হয়।

চূড়ান্ত নির্বাচনে একজন প্রার্থী এর জন্য প্রয়োজন হলে চারজন নির্বাচন করে প্যানেলে রাখা হয়। পরবর্তী সময়ে আরো প্রয়োজন হলে পর্যায়ক্রমে নিয়োগ দেওয়া হয়।

আবেদন প্রক্রিয়া

মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ পেশায় আবেদন প্রক্রিয়া অন্যান্য চাকরির মতোই। এজন্য সাম্প্রতিক তোলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, শিক্ষাগত যোগ্যতার সকল সার্টিফিকেটের সত্যায়িত ফটোকপি আবেদনপত্রের সাথে জমা দিতে হবে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডার অবশ্যই আবেদনপত্রের সাথে সংযুক্ত করতে হবে। তাছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ বা সার্টিফিকেট কোর্স সম্পন্ন করে থাকলেও বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে আবেদনপত্রে যোগ করতে পারেন। এতে চাকরি প্রার্থীর ওপর নিয়োগকর্তার আস্থা তৈরি হতে পারে।

ফার্মাসিউটিক্যালস এ প্রতি বছর কত লোক নিয়োগ হয়?

রিপ্রেজেন্টেটিভ পেশায় কত লোক নিয়োগ হয়, এর কোনো নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। তবে সারা বছর এই পেশায় লোক নিয়োগ করা হয়। মোস্তফা আহসান বলেন, এই সেক্টরে সারা দেশে লোক নিয়োগের কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে প্রতিবছর চার থেকে পাঁচ হাজার লোক যুক্ত হচ্ছে। কখনও কখনও এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এ ছাড়া অনেকেই ভালো করার কারণে ওপরের পদে চলে যাওয়ার সুযোগ পান।

ফার্মাসিউটিক্যালস চাকরিতে কাজের চ্যালেঞ্জ কী কী?

এখানে প্রতিনিয়ত আপডেট থাকতে হয়। চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে হয়। প্রতিটি ধাপে মেধার পরিচয় দিতে হয়। সাধারণ মানুষের নিরাময় ও স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রাখতে হয়। কোনো কাজে অবহেলা করা যাবে না। কর্মী নিয়োগের পর ন্যূনতম ছয় মাসের স্ট্রাকচারাল ট্রেনিং দেওয়া হয়। এর মধ্যে এক মাসের ওরিয়েন্টেশন ট্রেনিংও আছে। এ ছাড়া সুপারভাইজরের মাধ্যমে প্রতি মাসে ট্রেনিং হয়। বিশেষ ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশেও পাঠানো হয়।

তুনদের জন্য ফার্মাসিউটিক্যালস চাকরির পরামর্শ

আপনি কী করবেন, সেটা আগে ঠিক করুন। যদি আপনি ফার্মাসিউটিক্যাল কম্পানিতে কাজ করার জন্য মন স্থির করেন, তাহলে এই প্রতিষ্ঠানে কোন পদে চাকরি করবেন, সেটা বাছাই করুন। পদসংশ্লিষ্ট কাজের ব্যাপারে বেসিক ধারণা রাখতে হবে। বিষয়ভিত্তিক টেকনিক্যাল বিষয়গুলোর ওপরও জানাশোনা থাকতে হবে। নিয়োগ পাওয়ার পর হাতে-কলমে কাজ করার জন্য মানসিকভাবে তৈরি থাকতে হবে। কোনো কাজকেই ছোট করে দেখা যাবে না। এই চাকরিতে যোগ দিয়ে অন্য চাকরির পেছনে দৌড়ালে খুব একটা ভালো করা যাবে না। তাই মন স্থির রেখে ভালোভাবে কাজ করে গেলেই ভালো পদে ওঠা যাবে।

Leave a Comment