নার্স এর কাজ কি? সরকারী, বেসরকারি, যোগ্যতা এবং পদোন্নতি

নার্স শব্দের অর্থ সেবিকা বা সেবক। মিডওয়াইফ শব্দের অর্থ ধাত্রী।

নার্সিং ইংরেজি- Nursing এমন একটি পেশা যা সাধারণ জনগণের স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত। এ পেশার মাধ্যমে ব্যক্তিগত, পারিবারিক কিংবা সামাজিকভাবে কোন রোগী বা ব্যক্তির স্বাস্থ্য পুণরুদ্ধার এবং জীবনযাত্রার গুরুত্বতা তুলে ধরা হয়। এ পেশার সাথে সম্পৃক্ত, দক্ষ কিংবা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি নার্স বা সেবিকা নামে পরিচিত। প্রধানতঃ নারীরাই নার্সিং পেশার সাথে জড়িত থাকেন। তবে এখন অনেক পূরুষ ও এই পেষার সাথে যুক্ত হচ্ছেন।

নার্স হচ্ছে এক জন প্রশিক্ষিত মানুষ যিনি কোনো দেশ বা সংস্থার নিকট সার্টিফিকেট পেয়ে মানব সেবায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন। হসপিটালে প্রতিদিন ৬ থেকে ১২ ঘন্টা নার্সদের ডিউটি করতে হয়। বাংলাদেশ নার্সের অনেক চাহিদা আছে। যে পরিমাণ নার্স আছে সেটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিমাণের তুলনায় একান্তই নগণ্য।  

চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে একজন নার্স রোগীর চিকিৎসা সেবা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পরিচর্যার কাজ করে থাকেন। যারা সেবামূলক পেশায় যেতে চান, তাদের জন্য নার্সিং একটি আকর্ষণীয় পেশা হতে পারে। দেশের প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি ক্লিনিকে নার্সদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সরকারের সেবা পরিদপ্তর প্রতি বছর প্রচুর নার্স নিয়োগ দিয়ে থাকে। সম্মানের পাশাপাশি এ পেশায় রয়েছে আকর্ষণীয় উপার্জনের সুযোগ।

নার্সিং পড়ার নুন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা কি

নার্সিং কোর্সে আবেদন করতে হলে আপনাকে দেশের যেকোনো শিক্ষা বোর্ড থেকে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় ন্যূনতম GPA 2.25 এবং এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় ন্যূনতম GPA 2.50 পেয়ে পাস হতে হবে।

সাধারণত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে নার্স নিয়োগ করে বাংলাদেশ সরকারের সেবা পরিদপ্তর। তাই নিয়োগ পাওয়ার জন্য আপনাকে বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল অনুমোদিত যেকোন সরকারি-বেসরকারি নার্সিং কলেজ বা নার্সিং ইন্সটিটিউট থেকে Diploma in Nursing বা BSc in Nursing কোর্স সম্পন্ন করতে হবে।উক্ত কোর্স সম্পন্ন করে যে কেউ নার্সিং পদের জন্য আবেদন করতে পারেন।

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল অনুমোদিত যেকোন সরকারি বা বেসরকারি নার্সিং কলেজ বা নার্সিং ইন্সটিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং বা বিএসসি ইন নার্সিং কোর্স সম্পন্ন করে যে কেউ নার্সিং পদের জন্য আবেদন করতে পারেন। প্রতিষ্ঠানভেদে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পরে নার্সদের আরো দক্ষ করে তোলা হয়।

সরকারি নার্সিং এ আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা কি?

১. ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি- এস,এস,সি বা সমমানের পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ (Grade Point Average) ২.৫০ এবং এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ (Grade Point Average) ২.৫০ প্রাপ্ত মহিলা প্রার্থীগণ আবেদন করতে পারবেন।

২.  ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন নার্সিং(বিএসসি ইন নার্সিং)– বিজ্ঞান বিভাগে জীববিজ্ঞান বিষয়ে পাসসহ এইচ এস সি বা সমমানের পাস । এসএস সি বা সমমান এবং এইচ এস সি বা সমমানের পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ-এর যোগফল ন্যূনতম ৬.০০ থাকতে হবে।  কোন অবস্থাতেই এসএসসি বা সমমান এবং এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ (গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ) ২.৫০ এর নিচে গ্রহণ যোগ্য হবে না।

৩. ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স এন্ড মিডওয়াইফারি- এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ (Grade Point Average) ২.৫০ এবং এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ (Grade Point Average) ২.৫০ থাকতে হবে। দুটি পরীক্ষায় জিপিএ (Grade Point Average) ৫.৫০ থাকতে হবে। কোন পরীক্ষাতেই (Grade Point Average) জিপিএ ২.৫০ এর নীচে গ্রহণ যোগ্য হবে না।

পড়ুনঃ ফার্মাসিউটিক্যালস চাকরি কেমন? নতুনদের চাকরির সুযোগ সবচেয়ে বেশি

নার্সিং পড়াশোনার খরচ কেমন?

সরকারি নার্সিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নামমাত্র খরচে পড়াশোনার সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা। উপরন্তু থাকে বার্ষিক শিক্ষাভাতা।

অন্যদিকে বেসরকারি নার্সিং কলেজ ও ইনস্টিটিউটে বিএসসি ও পোস্ট বেসিক বিএসসি পুরো কোর্সের জন্য দুই থেকে তিন লাখ টাকা খরচ হয়। ডিপ্লোমা কোর্সের জন্য খরচ হবে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। তবে প্রতিষ্ঠানভেদে কোর্স ফি ভিন্ন হয়। বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই বৃত্তি নিয়ে পড়ার সুযোগ পান।

একজন নার্স কোথায় কাজ করেন?

  • সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে;
  • বেসরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে;
  • আইনশৃঙ্খলা ও সামরিক বাহিনীর চিকিৎসা বিভাগে;
  • ইন-হাউজ মেডিকেল সেন্টারে
  • ব্যক্তিগত ক্লিনিকে।

কাজের ক্ষেত্র ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী আপনি অ্যাসিস্ট্যান্ট নার্স, স্টাফ নার্স, ওটি সিস্টার বা নার্সিং সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি নার্সিং কলেজে ইন্সট্রাক্টর বা ডেমোনস্ট্রেটর ইনচার্জ হিসেবেও অনেকে নিয়োগ পান। এছাড়া, নার্সিং অধিদপ্তরে প্রজেক্ট অফিসার, সহকারী পরিচালক পদেও কাজ করতে পারেন।

একজন নার্স এর কাজ কি কি?

অনেকেই মানুষের সেবা মূলক কাজ আত্ননিয়োগ করতে চান। এমনি একটি সেবা মূলক পেশা হচ্ছে নার্সিং। এই পেশার মাধ্যমে মানুষের সেবা করা যায়। একজন নার্স এর কাজ হলো:

  • পুরো মেডিকেল এর রোগীদের স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মকান্ডে কর্মকান্ডে ডক্টরকে সার্বক্ষনিক সহায়তা করা।
  • প্রয়োজন অনুযায়ী ফ্লোর পরিদর্শন করা।
  • প্রতিদিন অন্তত একবার ফ্লোর এরিয়াতে সংরক্ষিত ফাস্ট এইড বক্স চেক করা, এবং প্রয়োজন অনুয়ারী রোগীদের স্বাস্থ সম্পর্কে সচেতন করা।
  • ফার্স্ট এইডারদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে ফ্লোরের সব রকমের ফার্স্ট এইডস সুবিধা নিশ্চিত করা।
  • যে কোন অসুস্থতা ও দূর্ঘটনাজনিত সমস্যা ডক্টরের পরামর্শ মোতাবেক দ্রুত সমাধানের ব্যাবস্থা করতে হবে।
  • সকল প্রকার মেডিকেল ও প্রয়োজনীয় রেকর্ড রেজিস্টার করা।
  • রোগীদের প্রয়োজনীয়  ঔষধ সরবরাহ করা এবং যথাযথ রেকর্ড সংরক্ষন করা নার্স এর দায়িত্ব এবং কর্ত্বব্য।
  • কোন রোগীকে হাসপাতালে প্রেরণের প্রয়োজন হলে, তাকে হাসপাতালে প্রেরণ করা।
  • যে কোন প্রকার সমস্যা হলে এইচ এর ম্যানেজার কে অবহিত করা।

একজন নার্স হাসপাতালে নার্স হিসাবে কাজ করার পাশাপাশি হোম মেডিকেল নার্সিং সেবাও সরবরাহ করে।হোম মেডিকেল নার্সিং সেবা হ’ল বাড়িতে মেডিকেল চিকিৎসা সেবা সরবরাহ করা। হাসপাতালে চিকিত্সা যত্ন নিতে আগ্রহী নন এমন রোগীরা। তারাই সাধারণত নার্সদের মাধ্যমে ঘরে বসে মেডিকেল নার্সিং সেবা গ্রহণ করে। মেডিকেল হোম নার্সিং সেবার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:

  • চিকিৎসা পরবর্তী স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা।
  • উন্নত মেডিকেল সেবা সরবরাহ করা।
  • অ্যানাস্থেসিওলজি।
  • কার্ডিওভাসকুলার ওষুধ।
  • সমালোচনামূলক যত্নের ওষুধ।
  • দন্তচিকিত্সা।
  • চর্মরোগবিদ্যা।
  • জরুরী ঔষধ ।
  • এন্ডোক্রিনোলজি।
  • গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি।

একজন নার্স এর প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য কী?

  • ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা (যেমনঃ রক্তচাপ মাপা) করা;
  • ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীকে সঠিকভাবে ঔষধ খাওয়ানো;
  • রোগীর স্বাস্থ্যের অগ্রগতি বা অবনতি সম্পর্কে ডাক্তারকে নিয়মিত জানানো;
  • অপারেশনের আগে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামসহ ওটি (Operation Theater) প্রস্তুত করা;
  • রোগীকে অপারেশন টেবিলে নিয়ে যাওয়া;
  • অপারেশনের সময় চিকিৎসকে সহায়তা করা;
  • রোগীর সার্বিক পরিচর্যার দায়িত্ব নেয়া।

নার্সের যে দক্ষতা ও জ্ঞান অবশ্যই থাকতে হবে

  • রোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার খুঁটিনাটি জানা;
  • স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ব্যবহৃত সাধারণ যন্ত্রপাতি (যেমনঃ রক্তচাপ মাপার যন্ত্র বা স্ফিগমোম্যানোমিটার) ব্যবহার করতে পারা;
  • ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ও পরামর্শ সঠিকভাবে বোঝা ও সে অনুযায়ী রোগীর পরিচর্যা করা;
  • রোগীর সমস্যার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা ও ডাক্তারকে জানানো;
  • রোগীর স্বাস্থ্যের অগ্রগতি ও অবনতি সম্পর্কে নিয়মিত প্রতিবেদন তৈরি করতে পারা;
  • অপারেশন থিয়েটারের যন্ত্রপাতি সম্পর্কে জ্ঞান রাখা ও প্রয়োজনে ডাক্তারকে সহায়তা করা।

নার্সিং কোথায় পড়বেন?

সেবা পরিদপ্তরের অধীনে নার্সিং কলেজ ও ইনিস্টিটিউটে নার্সিং পড়তে পারেন। সারা দেশের সরকারি ৭টি ও বেসরকারি ২১টি নাসিং কলেজ ও সরকারি ৪৩টি নার্সিং ও বেসরকারি ৭০টি ইনিস্টিটিউটে তিন বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি ও ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি এবং চার বছর মেয়াদী ব্যাচেলর অফ সায়েন্স ইন নার্সিং কোর্সে পড়ানো হয়।

কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নার্সিং বিষয়ক ডিপ্লোমা পড়ানো হয়। এছাড়া অর্থোপেডিকস, সাইকিয়াট্রিক, পেডিয়াট্রিক, সিসিইউ, আইসিইউ ও কার্ডিয়াক নার্সিংসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর এক বছর মেয়াদী কোর্স চালু আছে।

নার্সিংয়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে কোর্সের শেষে ছয় মাসের ইন্টার্নশিপ সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল আয়োজিত পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এতে উত্তীর্ণ হবার মাধ্যমে নিবন্ধিত হলেই পেশা হিসাবে নার্সিং নিতে পারবেন।

আরও পড়ুনঃ এয়ার হোস্টেস বা বিমান বালা হতে চাইলে কিভাবে প্রস্তুতি নিবেন?

সরকারি নার্সদের বেতন কত?

ক্যারিয়ারের শুরুতে অ্যাসিস্ট্যান্ট নার্স বা ওটি সিস্টার হিসেবে সরকারি হাসপাতালে যোগ দিলে একজন নার্স সরকারি বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী ৳৮,০০০ – ৳১৬,৫৪০ মাসিক বেতন পেয়ে থাকেন।

বেসরকারি ক্লিনিকে সাধারণত মাসিক ৳১৪,০০০ থেকে বেতন শুরু হয়। তবে প্রতিষ্ঠানভেদে কমবেশি হতে পারে আয়।

একজন বিএসসি নার্সিং কাজ কি এবং বেতন কত?

বর্তমানে পেশা হিসেবে নার্সিং বেশ জনপ্রিয়। আপনি যদি নার্সিং পড়ার জন্য মনস্থির করে থাকেন তবে আমি বলবো আপনি সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মনে রাখবেন, নার্স এবং ডাক্তারদের কখনোই কেউ অবমূল্যায়ন করে না। সুতরাং আপনি নিশ্চিন্তে নাসিং পড়তে পারেন। আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে বিবেচনা করলে দেখা যায়, গত কয়েক বছরে দেশে হাসপাতাল সহ প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়গনষ্টিক সেন্টারের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। চিকিৎসা সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট এসব প্রতিষ্ঠানে নার্স বা সেবিকাদের চাহিদাও দিনদিন বেড়ে চলেছে। মানবসেবা করা ছাড়াও ভালো ক্যারিয়ারের সম্ভাবনা রয়েছে। এক কথায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্ভাবনাময় খাত।দেশে সরকারি- বেসরকারি হাসপাতাল, সমাজসেবা অধিদফতর, এনজিও এমনক পর্যটন করপোরেশনেও ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে। বিদেশে কাজ করতে চাইলে বিএসসি পাস করে সিজিএফএনএস বা কমিশন অন গ্র্যাজুয়েটস অব ফরেইন নার্সিং স্কুলসের পরীক্ষায় পাস করে কানাডাসব বিভিন্ন দেশে এই পেশায় কাজ করার সুবিধা রয়েছে। সরকারি হসপাতালগুলোতে একজন নার্স শুরুতেই ২০ হাজার টাকা বেতন পেতে পারেন। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে এর পরিমাণ আরো বেশি হবে।

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল কর্তৃক রেজিস্ট্রার্ড প্রতিষ্ঠান থেকে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অথবা বিএসসি ইন নার্সিং ডিগ্রি।

বেতনঃ সিনিয়র স্টাফ নার্স পদে চাকরি পেলে দশম গ্রেডে বেতন পাবেন। সে ক্ষেত্রে বেতন স্কেল হবে ১৬,০০০–৩৮,৬৪০ টাকা

প্রহান কাজঃ বিএসসি নার্সিং একটি ভঙ্গুর কোর্স। নার্সরা হলেন প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা পেশাদার যারা রোগীদের যত্ন নিতে পারেন, তাদের চিকিত্সা করতে পারেন এবং চিকিত্সকদের চিকিত্সা এবং অস্ত্রোপচারে সহায়তা করতে পারেন।

নার্সিং পেশায় সুযোগ সুবিধা, বেতন, ও পদোন্নতি কেমন?  

বাংলাদেশে সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিতসহ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নার্সিং বিষয়ে ডিগ্রি দেওয়া হয়। সরকারি পর্যায়ে দেশের সাতটি নার্সিং কলেজে বিএসসি-ইন-নার্সিং, চারটি কলেজে পোস্ট বেসিক বিএসসি নার্সিং, পাবলিক হেলথ নার্সিং ডিগ্রি দেওয়া হয়। ৪৩টি সরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউটে দেওয়া হয় ডিপ্লোমা-ইন-নার্সিং সায়েন্স, ডিপ্লোমা-ইন-মিডওয়াইফারি ডিগ্রি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিএসসি-ইন-নার্সিং ও ডিপ্লোমার সুযোগ আছে।

কাজের সুযোগ-সুবিধা

দেশের সরকারি ও বেসরকারি সব হাসপাতাল, ক্লিনিক, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার সেন্টার, নগর মাতৃসদন, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানেই নার্সদের চাকরির সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে নার্সিং ডিগ্রি নিয়ে বিদেশেও চাকরির সুযোগ রয়েছে। বিগত বছরে জর্দান, মালয়েশিয়াসহ অনেক দেশে বাংলাদেশ থেকে নার্স নেওয়া হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশেও বাংলাদেশের নার্সরা কাজের সুযোগ পান।

বেতন ভাতা

একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা পেয়ে থাকেন। শুরুতেই একজন নার্সকে ২০০৯ সালের বেতনক্রম অনুযায়ী ৮০০০-১৬৫৪০ টাকা স্কেলে বেতন দেওয়া হয়। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে একজন নার্স ১০০০০ থেকে ১৫০০০ টাকা বেতনে চাকরি শুরু করতে পারেন। প্রতিষ্ঠানভেদে বেতনের তারতম্য হয়ে থাকে।

পদোন্নতির সুযোগ

একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স তিন থেকে চার বছরে প্রথম পদোন্নতি পেয়ে নার্সিং সুপারভাইজার পদমর্যাদা পান। দ্বিতীয় ধাপে জেলা পাবলিক হেলথ নার্স, হাসপাতালগুলোতে ডেপুটি নার্সিং সুপারিনটেনডেন্ট, ওটি সুপারভাইজর, নার্সিং কলেজে ইনস্ট্রাক্টর, ডেমোনেস্ট্রেটর, ইনস্টিটিউটে নার্সিং ইনস্ট্রাক্টর বা ইনস্ট্রাক্টর ইনচার্জ হতে পারেন। পরবর্তী ধাপে হাসপাতালে নার্সিং সুপারিনটেনডেন্ট, নার্সিং কলেজে প্রভাষক, ইনস্টিটিউটে প্রিন্সিপাল, নার্সিং অধিদপ্তরে প্রজেক্ট অফিসার ও সহকারী পরিচালক পদে পদোন্নতির সুযোগ আছে। এ সময় তাঁরা প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে বিবেচিত হবেন।

তবে বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিলে নিবন্ধিত ছাড়া কোনো নার্স কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ পাবেন না।

মানবিক বা বানিজ্য বিভাগ থেকে কি নার্সিং এ পরীক্ষা দেওয়া যায়?

 হ্যা, পারবেন, তবে বিএসসি বা ব্যাচেলর সায়েন্স ইন নার্সিং এ শুধু মাত্র সাইন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের পরীক্ষার্থীরা এপ্লাই করতে পারে।

একজন নার্সের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?

আমাদের দেশে প্রয়োজনের তুলনায় নার্সের সংখ্যা এখনো কম। তাই নার্স হিসাবে নিবন্ধন পাবার পর তুলনামূলকভাবে কম সময়ে চাকরি পাওয়া সম্ভব।

বিদেশেও দক্ষ ও অভিজ্ঞ নার্সের চাহিদা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডাতেও বাংলাদেশের নার্সরা কাজ করছেন বেশ সুনামের সাথে। সম্ভাবনাময় এ পেশায় রয়েছে আর্থিক স্বচ্ছলতা ও মর্যাদার জীবন।

নার্স থেকে পদোন্নতি পেয়ে সিনিয়ার স্টাফ নার্স ও সুপারিন্টেনডেন্ট বা নার্সিং ট্রেনিং কলেজের প্রশিক্ষক হওয়ার জন্য প্রয়োজন অভিজ্ঞতা ও বিশেষায়িত কারিগরি দক্ষতা। এছাড়াও সরকারের সেবা পরিদপ্তরের উচ্চ পদে যেতে পারেন নার্সরা। সেবাধর্মী এ পেশায় আপনিও অর্জন করতে পারেন সামাজিক মর্যাদা ও ভালো আয়ের সুযোগ।

ছেলেরা কি নার্সিং এর জন্য আবেদন করতে পারবে?

হ্যা, নার্সিং অত্যন্ত ভালো একটি ক্যারিয়ার। ছেলে-মেয়ে কোন বিশয়ই নয় এখানে। একজন সরকারি নার্সের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল। ১ম শ্রেণির নার্সরা ৳৭০,০০০ এর ওপর বেতন পায়। ২য় শ্রেণির নার্সরা ৳৫৫,০০০ এর অধিক এবং ৩য় শ্রেণীর নার্সরা ৳২৫,০০০ এর বেশি বেতন পায় (তাদের টা কম কারণ তার সবে মাত্র চাকরি শুরু করেছে) এবং তাদের পেন্সন থাকে ৳১ কোটি অথবা তারো বেশি (পজিসনের ওপর নির্ভর করে)

বেসরকারি হাসপাতালে একজন নার্সের বেতন ৳২০,০০০ থেকে শুরু করে ৳৮০,০০০ পর্যন্ত হতে পারে । বেতনের অঙ্ক নির্ভর করে আপনার পজিশন (নার্সদের ভেতরেও অনেক পজিশন থাকে) এবং আপনার হাস্পাতালের মানের ওপর (এইটা শুধু বেসরকারি হাস্পাতালের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য; সরকারি হাসপাতালের কর্মচারীরা সরাসরি সরকারের থেকে টাকা পায়)

নার্সিং পেশার সুবিধা ও অসুবিধা

প্রতিটি নার্সের এই সত্যের জন্য প্রস্তুত হওয়া উচিত যে নির্বাচিত পেশার সুবিধা এবং অসুবিধা উভয়ই রয়েছে।

সুবিধাঃ

নার্সরা নিম্নলিখিত কর্মসংস্থান সুবিধাগুলি আশা করতে পারে:

  • আরও কর্মজীবনে অগ্রগতির জন্য চিকিৎসা শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ।
  • বুঝতে পেরে একজন নার্স অনেক মানুষের জীবন বাঁচায়।
  • রোগীদের ধন্যবাদ যারা সমর্থন পেয়েছেন এবং একজন নার্সের সাহায্যে চিকিৎসা পেয়েছেন।
  • একজন অভিজ্ঞ নার্স স্বল্পতম সময়ে একটি উপযুক্ত খণ্ডকালীন চাকরি খুঁজে পেতে পারেন। এইভাবে, অতিরিক্ত আয় পাওয়া নার্সদের জন্য সেরা বিকল্প হয়ে ওঠে যারা সর্বোত্তম জীবনযাত্রার জন্য সংগ্রাম করে।
  • নার্স হিসাবে কাজ করার উপরোক্ত সুবিধাগুলি অবদান রাখে শ্রম কার্যকলাপআনন্দ এবং সর্বোত্তম আয় এনেছে।

অসুবিধাঃ

এটি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে একজন নার্স হিসাবে কাজ করার সময়, পেশার নিম্নলিখিত অসুবিধাগুলি রয়েছে:

  • নাইট শিফট, যা প্রায়ই ছুটির দিনে পড়ে।
  • ন্যূনতম মজুরি.
  • স্ট্রেসফুল পরিস্থিতি যা প্রায়ই কর্মক্ষেত্রে সম্মুখীন হয়।
  • গুরুতর শারীরিক পরিশ্রম, যার জন্য সমস্ত নার্স প্রস্তুত করা হয় না।
  • রোগীদের সাথে যোগাযোগ করার সময় সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি।
  • সব অসুস্থ মানুষ কৃতজ্ঞতা দেখাতে পারে না।

উপরের অসুবিধাগুলি সত্ত্বেও, আধুনিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে একজন নার্সের কাজ চাহিদা এবং বেশ মর্যাদাপূর্ণ হতে পারে।

একজন দক্ষ সেবিকার কি কি গুণাবলী থাকা অবশ্যক

একজন দক্ষ নার্স হওয়ার জন্য যদিও নিঃস্বার্থ হওয়া দরকার কিন্তু শুধু তাই-ই যথেষ্ট নয়। ভালো নার্স হওয়ার জন্য অনেক প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা দরকার। নার্সিংয়ের ওপর এক থেকে চার বছর বা তারও বেশি সময় পড়াশোনা করতে এবং হাতে কলমে শিক্ষা নিতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কোন গুণগুলো থাকলে একজন ভাল নার্স হওয়া যায়? ‘সচেতন থাক’ নামক একটি পত্রিকা কিছু অভিজ্ঞ নার্সদের এই প্রশ্নটা করেছে, এখানে তাদের কয়েকজনের কথা তুলে ধরা হলো।

‘ডাক্তার রোগ সারান কিন্তু নার্স রোগীর দেখাশোনা করেন। এই জন্য নার্সদের প্রায়ই মানসিক ও শারীরিকভাবে ভেঙে পড়া সেই সমস্ত রোগীদের গড়ে তুলতে হয়, যারা জানতে পারে যে তাদের এক দীর্ঘস্থায়ী রোগ হয়েছে বা খুব শিগগিরই মারা যাবে। আপনাকে একজন রোগীর মায়ের ভূমিকা নিতে হবে।’-কারমেন কিলমার্টিন, স্পেন।

‘একজন রোগীর ব্যথা ও যন্ত্রণাকে অনুভব করতে হবে ও তাকে সাহায্য করার ইচ্ছা থাকতে হবে। এই জন্য দয়া ও ধৈর্য থাকা দরকার। নার্সিং ও চিকিৎসা বিদ্যা সম্পর্কে সব সময় আরও বেশি জানতে হবে।’-তাদাশি হাতানো, জাপান।

‘সম্প্রতি নার্সদের আরও বেশি করে পেশাদারি জ্ঞান নেয়ার দরকার হয়েছে। তাই, তাদের পড়াশোনা করার ইচ্ছা ও তা বোঝার ক্ষমতা থাকা দরকার। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনে নার্সদের তড়িত সিদ্ধান্ত ও সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে।’-কেইকো কাওয়ানে, জাপান।

‘একজন নার্স হিসেবে আপনাকে আন্তরিক মনোভাব দেখাতে হবে। আপনার সহ্য শক্তি থাকতে হবে এবং সহানুভূতি দেখাতে হবে।’-আরাসেলি গারসিয়া পাডিয়া, মেক্সিকো।

‘একজন ভাল নার্সের মনোযোগ দিয়ে পড়ার অভ্যাস থাকতে হবে, সবকিছু খুব ভালভাবে খেয়াল করতে এবং পেশাদারি হতে হবে। একজন নার্সের মধ্যে যদি আত্মত্যাগের মনোভাব না থাকে অর্থাৎ তার মধ্যে যদি সামান্য স্বার্থপরতা থাকে বা তার থেকে উঁচু মর্যাদার মেডিকেল কর্তৃপক্ষের কেউ পরামর্শ দিলে যদি সে বিরক্ত হয়, তাহলে ওই নার্স রোগী এবং তার সহকর্মীদের জন্য অনুপযোগী বলে বিবেচিত হবে।’-রোসাঞ্জেলা সান্তোষ, ব্রাজিল।

‘কয়েকটা গুণ থাকতেই হবে যেমন, নমনীয় মনোভাব, সহ্য শক্তি এবং ধৈর্য। শুধু তাই নয়, আপনাকে খোলা মনের হতে হবে আর সেইসঙ্গে সহকর্মীদের ও মেডিকেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা থাকতে হবে। দক্ষভাবে কাজ করে চলার জন্য আপনাকে নতুন নতুন কৌশলগুলো তাড়াতাড়ি শিখে নিতে হবে।’-মার্ক কোলার, ফ্রান্স।

‘লোকেদেরকে ভালবাসতে হবে এবং অন্যদের সাহায্য করার ইচ্ছা আপনার থাকতে হবে। কঠিন মানসিক চাপ মোকাবিলা করার শক্তি থাকতে হবে কারণ এই কাজে কোনভাবেই ভুল করা চলবে না। আপনার মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতাও থাকতে হবে যাতে প্রয়োজনে অল্প কয়েকজন সহকর্মী নিয়েও উন্নত মানের সেবা প্রদান করতে পারেন।’-ক্লডিয়া রেকারবাকার, নেদারল্যান্ড।

তবে এটি সত্যি যে নার্সিংয়ে আপনাকে বৃহৎ হৃদয় নিয়ে আসতে হবে বিতরণ করতে হবে ভালবাসার স্পর্শ। রোগীর  অনুভূতি নিজের ভিতরে বোঝার অসীম ক্ষমতা অর্জন করতে হবে।

শেষ কথা

আমাদের দেশে প্রয়োজনের তুলনায় যোগ্য নার্সের সংখ্যা এখনো কম। কারণ অধিকাংশ মেধাবী মেয়েরা নার্সিং পড়ার যোগ্যতা থাকা সত্যেও শুধুমাত্র সঠিক ধারণার অভাবে মহৎ এ পেশায় আসতে পারছে না। তাই আমরা আশা করছি এই লেখার মাধ্যমে আপনি নার্সিংয়ে পড়ার যাবতীয় তথ্য জেনে গেছেন।

দেশে এখন প্রায় সব জেলা-উপজেলা শহরগুলোতেই সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। এর ফলে ক্রমাগত বেড়ে চলছে হাসপাতালের সংখ্যা। আর এসব প্রতিষ্ঠানে প্রতিবছরই প্রচুর সংখ্যক নার্সের প্রয়োজন হয়। তাই চাইলে এ পেশায় আসতে পারেন আপনিও।

তবে শুধু দেশেই নয়, বর্হিবিশ্বে দক্ষ ও অভিজ্ঞ নার্সের চাহিদা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডাসহ বিশ্বের বেশকিছু উন্নত দেশে বাংলাদেশের পেশাদার নার্সরা সুনামের সাথে কাজ করছেন। তাই মানব সেবাধর্মী এ পেশায় যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে আপনিও অর্জন করতে পারেন সামাজিক মর্যাদা ও ভালো আয়ের সুযোগ।

Leave a Comment