জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার (জেসিও) এটি এমন একটি পদমর্যাদা যা একদল সামরিক কর্মীদের জন্য ব্যবহৃত হয়, যা হাবিলদারদের চেয়ে বেশি এবং লেফটেন্যান্টের চেয়ে কম পদস্থ বিশিষ্ট, এই পদমর্যাদাটি কেবল বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তান ব্যবহার করে। সিনিয়র হাবিলদারদের মেধা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে জেসিও পদে বা জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়, যা শূন্যপদের সংখ্যা দ্বারা সীমাবদ্ধ।
জুনিয়র কমিশন্ড অফিসারের কাজ কী?
জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার পদে সরাসরি নিয়োগ দেয়া হয় না। ওয়ারেন্ট অফিসার হতে হলে প্রথমে সার্জেন্ট র্যাংকে পৌছাতে হবে। এরপরে যোগ্যতা এবং শুন্য পদের ভিত্তিতে ওয়ারেন্ট অফিসারে প্রোমোশন হয়।
ওয়ারেন্ট অফিসাররা তাদের নিজ নিজ ফিল্ডের স্পেশালিষ্ট। তারা মূলত ইউনিটের কমান্ড এলিমেন্টে (ব্যাটালিয়ন/রেজিমেন্ট হেডকোয়ার্টার) কাজ করেন, এছাড়া বিভিন্ন এডমিনিস্ট্রেটিভ দায়িত্ব ও পালন করেন।
এছাড়াও সেনাবাহিনীর এডুকেশন কোর এবং বিমানবাহিনীর এডুকেশন ব্রাঞ্চে শিক্ষকদের সরাসরি ওয়ারেন্ট অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষার মান একই।
সেনাবাহিনীর পদবীসমুহ কি?
সেনাবাহিনীতে মুলত তিনটি ক্যাটাগরি রয়েছে ।
ক। অফিসার
খ। জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার (জেসিও)
গ। নন কমিশন্ড অফিসার (এনসিও) ও অন্যান্য পদবী
সেনাবাহিনীর জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার (ওয়ারেন্ট অফিসার) পদটি কত তম গ্রেড?
১. জেনারেল
২.লেফটেন্যান্ট জেনারেল
৩.মেজর জেনারেল
৪.ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল
৫.কর্নেল
৬.লেফটেন্যান্ট কর্নেল
৭.মেজর
৮.ক্যাপ্টেন
৯.লেফটেন্যান্ট
👉এখান থেকে নন কমিশন অফিসার শুরু
১০.মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার
১১.সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার
১২.ওয়ারেন্ট অফিসার
১৩.সার্জেন্ট
১৪.কর্পোরাল
১৫.ল্যান্স কর্পোরাল
১৬.সৈনিক
জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার পদে নিয়োগ পদ্ধতি কিভাবে হয়?
শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ স্বীকৃত যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক (বিএ/বিএসসি/বিকম) বা সমমান পাস করা প্রার্থীরা জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার (ওয়ারেন্ট অফিসার) পদের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে শিক্ষা প্রশিক্ষণে ডিগ্রি কিংবা ডিপ্লোমাধারী এবং শিক্ষকতায় অভিজ্ঞ এমন প্রার্থীরা ‘অতিরিক্ত যোগ্য’হিসেবে বিবেচিত হবেন। স্নাতক বা সমমানে ন্যূনতম সিজিপিএ ২.০০ এবং এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানে অন্তত জিপিএ ৩.০০ থাকতে হবে।
বয়সঃ জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার পদের জন্য বয়স হতে হবে ২০ থেকে ২৮ বছর। বয়সের ক্ষেত্রে অ্যাফিডেফিট গ্রহণ করা হবে না।
প্রার্থীর শারীরিক যোগ্যতাঃ উচ্চতা ১.৬৮ মিটার (৫ ফুট ৬ ইঞ্চি), ওজন ৪৯.৯০ কেজি (১১০ পাউন্ড), বুকের মাপ স্বাভাবিক অবস্থায় ০.৭৬ মিটার (৩০ ইঞ্চি), প্রসারণ অবস্থায় ০.৮১ মিটার (৩২ ইঞ্চি) থাকতে হবে। এ ছাড়া প্রার্থীকে অবিবাহিত ও সাঁতার (অন্তত ৫০ মিটার) জানতে হবে।
জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার পদের জন্য কিভাবে অনলাইনে আবেদন করতে হয়?
army.teletalk.com.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। এরপর যে কোন টেলিটকের প্রিপেইড মোবাইল সংযোগ থেকে আবেদন ফি (৫০০ টাকা) জমা দিতে হবে। আবেদন ফি জমা দেওয়ার নিয়ম উল্লেখিত ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। আবেদন ফি জমা দেওয়ার পর আবেদনপত্রের তথ্য পরিবর্তন করা যাবে না। আবেদন ফি জমা দেওয়ার পর পাওয়া আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে ওয়েবসাইটে লগইন হতে হবে। লগইন করার পর ‘প্রাথমিক নির্বাচনী পরীক্ষা’র অ্যাডমিট কার্ড ডাউনলোড করে প্রিন্ট করতে হবে।
জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার পদে প্রাথমিক বাছাইয়ের জন্য কি কি আনতে হবে?
১. আবেদনপত্রের (অনলাইনে পূরণকৃত) কপি।
২. গেজেটেড অফিসার কর্তৃক সত্যায়িত সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের আট কপি এবং স্ট্যাম্প সাইজের ছয় কপি রঙিন ছবি।
৩. গেজেটেড অফিসার কর্তৃক সত্যায়িত শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র এবং মার্কশিটের ফটোকপি।
৪. জাতীয় পরিচয়পত্র/স্মার্টকার্ডের (নিজ, পিতা ও মাতা) সত্যায়িত ফটোকপি।
৫. প্রবেশপত্র (প্রাথমিক নির্বাচনী পরীক্ষা)
যেভাবে বাছাই কার্য পদ্ধতি সম্পাদন করে
প্রার্থীরা তাঁদের আবেদনপত্রসহ অন্যান্য কাগজপত্র প্রাথমিক নির্বাচনী পরীক্ষার দিন নির্ধারিত ভেন্যুতে জমা দেবেন। প্রাথমিক নির্বাচনী পরীক্ষার ফলাফল একই দিনে জানিয়ে দেওয়া হবে। প্রার্থীদের প্রাথমিক নির্বাচনী পরীক্ষার (প্রাথমিক মেডিক্যাল ও মৌখিক পরীক্ষা) জন্য অনলাইনে পূরণ করা আবেদনপত্রসহ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত এলাকাভিত্তিক নিজ নিজ জেলার পাশে বর্ণনা করা পর্ষদ/এরিয়া সদর দপ্তরের (সেনানিবাস) সামনে নির্ধারিত তারিখে সকাল ৮টার মধ্যে উপস্থিত হতে হবে।
প্রাথমিক বাছাইয়ে পাস করা প্রার্থীরা ‘নির্বাচনী পরিষদ’ থেকে লিখিত পরীক্ষার প্রবেশপত্র নেবেন। আগামী ৬ ডিসেম্বর ২০১৯ (শুক্রবার) সকাল ৯টায় বাংলা, ইংরেজি, গণিত এবং সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে লিখিত পরীক্ষার জন্য ‘শহীদ রমিজ উদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, ঢাকা সেনানিবাস -এ উপস্থিত হতে হবে।
লিখিত পরীক্ষার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওয়েবসাইটে (www.army.mil.bd) প্রকাশ করা হয়। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক এবং চূড়ান্ত ডাক্তারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রশিক্ষণ কাল এবং সুযোগ সুবিধা
১২ সপ্তাহের মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণ এবং ১৯ সপ্তাহের বেসিক কোর্স গ্রহণ করতে হবে।
নির্ধারিত স্কেলে বেতন-ভাতা, পেনশনসহ বিনা মূল্যে আহার ও বাসস্থান, বিনা মূল্যে সরকারি পোশাক-পরিচ্ছদ, পরিবারের জন্য বিনা মূল্যে চিকিত্সা, ভর্তুকি মূল্যে রেশন প্রদান, সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্তানদের লেখাপড়ার সুযোগ।
আবেদনের প্রক্রিয়া
আগ্রহী প্রার্থীদের অনলাইনে (http://army.teletalk.com.bd) আবেদন করতে হবে।
পরিশেষে, সেনাবাহিনিতে জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার পদে ক্যারিয়ার হতে পারে সবচেয়ে সফলতা, অর্জন ও অহংকারের স্বাক্ষর। যেসকল তরুন-যুবক অথবা অভিভাবক্রা তাদের সন্তানের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবছেন তাদের জন্য সেনাবাহিনীর একজন গর্বিত সদস্য হতে পারে সবচেয়ে পছন্দের বিকল্প। কিন্তু এজন্য চাই সঠিক প্রস্তুতি ও অধ্যাবসায়।