আনসার শব্দটি আরবী, এর অর্থ সাহায্য কারী। বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি একটি বাংলাদেশী আধা-সামরিক বাহিনী। নুন্যতম ৬২ লক্ষ সদস্য নিয়ে এটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ একক বাহিনী। বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি এর প্রদান কাজ মুলত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, আইন প্রয়োগ ও সংরক্ষণ। এটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দ্বারা পরিচালিত হয়। আনসার মুলত একটি আরবি শব্দ যার অর্থ যে ব্যক্তি সাহায্য করে এবং বিশেষ করে তাদের বুঝায় যারা মুহাম্মদ (সা.) এর সাথে মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করে আসা মুহাজিরদেরকে সাহায্য করেন।
বর্তমানে এই বাহিনী তিনটি শাখার সমন্বয়ে গঠিত। সেগুলি যথাক্রমে-
- ব্যাটালিয়ন আনসার
- সাধারণ আনসার,
- গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী (ভিডিপি)
এদিকে গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী বা (ভিডিপি) বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, আইন প্রয়োগ ও সংরক্ষণের জন্য গঠিত একটি বাহিনী, বিশেষভাবে গ্রাম এবং শহরাঞ্চলের শান্তি ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করাই এদের মূল দায়িত্ব। এটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দ্বারা পরিচালিত হয়। নিরাপত্তা বাহিনী হিসাবে নিয়োজিত হলেও গ্রামের যেকোন উন্নয়নমূলক ও কল্যাণকর কর্মকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করে থাকে।
গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৫.৬ মিলিয়ন যার শতকরা ৫০ ভাগ মহিলা। প্রতিটি ভিডিপি ইউনিট সমান সংখ্যক নারী ও পুরুষ নিয়ে গঠিত। প্রতিটি গ্রামের জন্যেই, এক প্লাটুন পুরুষ এবং এক প্লাটুন মহিলা সদস্য থাকে। অনুরুপভাবে, বাংলাদেশের প্রতিটি মহানগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি পুরুষ ও একটি নারী প্লাটুন থাকে।
সম্প্রতি একটি তথ্য উঠে এসেছে যে, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি বাহিনীর নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল গার্ড করার প্রস্তাব পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি কীভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে?
১৯৪৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি আনসার বাহিনী প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং তৎকালীন পূর্ববাংলা আইন পরিষদে আনসার এ্যাক্ট অনুমোদিত হলে ১৭ জুন ১৯৪৮ সালে তা কার্যকর হয়। তখন থেকে এ বাহিনীর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সাময়িকভাবে ঢাকার শাহবাগে অনুষ্ঠিত হতো। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধকালে দেশের সীমান্ত ফাঁড়িগুলোতে আনসারদের প্রতিরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত করা হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার (মুজিবনগর) এর শপথ গ্রহণ শেষে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিকে আনসার প্লাটুন কমান্ডার ইয়াদ আলীর নেতৃত্বে ১২ জন আনসার বাহিনীর সদস্য গার্ড অব অনার প্রদান করে। স্বাধীনতা যুদ্ধকালে আনসার বাহিনীকে বিদ্রোহী আখ্যায়িত করে বিলুপ্ত করা হয়। প্রায় ৪০ হাজার রাইফেল নিয়ে আনসার সদস্যরা স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেয়। যুদ্ধে আনসার বাহিনীর ৯ জন কর্মকর্তা, ৪ জন কর্মচারী ও ৬৫৭ জন আনসারসহ সর্বমোট ৬৭০ জন শহীদ হন। বাহিনীর ১ জন বীর বিক্রম এবং ২ জন বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত হন। স্বাধীনতা উত্তরকালে ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ঢাকার অদূরে সাভারে আনসার বাহিনীর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।
এদিকে ১৯৭৬ সালে গ্রাম প্রতিরক্ষা দল (ভিডিপি) ও ১৯৮০ সালে শহর প্রতিরক্ষা দলের (টিডিপি) সৃষ্টি হয়। পরবর্তী সময়ে এ দুটি বাহিনীই আনসার বাহিনীর সঙ্গে একীভূত হয়। ১৯৭৬ সালে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুরে জাতীয় আনসার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (এনএটিসি) প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৩ সালে এর নামকরণ হয় আনসার ট্রেনিং স্কুল। ১৯৮৬ সালে আনসার ট্রেনিং স্কুলকে আনসার একাডেমিতে উন্নীত করা হয়। ১৯৯৫ সালে এর নামকরণ হয় আনসার-ভিডিপি একাডেমি। বাহিনী বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে আনসার বাহিনী আইন-১৯৯৫ এবং ব্যাটালিয়ন আনসার আইন ১৯৯৫- দ্বারা, যা সংসদ কর্তৃক গৃহীত হলে ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫ সালে মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাভ করে এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫ হতে কার্যকর হয়। এ দুটো আইন অনুসারে সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী আনসার বাহিনী একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী।
মুলত ভিডিপি প্রতিষ্ঠা লাভ করে ১৯৭৬ সালের ৫ জানুয়ারী এবং এর উদ্দেশ্য সংক্ষেপে : ( VDP) Village Defense Party.
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীতে আবেদনের শিক্ষাগত ও অন্য্যান্য যোগ্যতা কি?
বয়সঃ নুন্যতম ১৮ হতে সর্বোচ্চ ৩০ বছর। কোন ভাবেই ১৮ এর নিচে এবং ৩০ এর বেশি হতে পারবেনা।
শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ কোন স্বীকৃত বোর্ড হতে জুনিয়ের স্কুল সার্টিফিকেট (JSC) বা সমমানের পরীক্ষায় পাশ থাকতে হবে।
শারীরিক যোগ্যতাঃ –
উচ্চতাঃ নুন্যতম ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি
বুকের মাপঃ ৩০/৩২ ইঞ্চি
দৃষ্টি শক্তিঃ ৬/৬
এছাড়া অধিক উচ্চতা, শহীদ পরিবার, ক্রিড়া ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে অধিক যোগ্যতা সম্পন্ন, ভিডিপি/টিডিপি ট্রেইনিং প্রাপ্ত প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী (ভিডিপি) এর কাজ কি?
আনসার বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য
- জন নিরাপত্তামূলক কাজে সরকার বা সরকারের অধীন কোন কর্তৃপক্ষকে সহায়তা প্রদান এবং অন্য কোন নিরাপত্তামূলক কাজে অংশগ্রহণ করা;
- দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক নির্দেশিত কোন জনকল্যাণমূলক কাজে অংশ গ্রহণ করা৷
- দেশের সার্বভ্যমত্য রক্ষার সাহায্যে কাজ করা।
- দেশের আইন সৃংখলা রক্ষার্থে সরকারী আইন সৃংখলা বাহীনিকে সাহায্যকরা।
- বিশেষ করিয়া, এবং উপরোক্ত বিধানের সামগ্রীকতাকে ক্ষুণ্ন না করিয়া, বাহিনী, সরকারের নির্দেশে, নিম্নে বর্ণিত বাহিনীসমূহকে সহায়তা ও সাহায্য প্রদান করিবে, যথা: –
- স্থল বাহিনী;
- নৌ-বাহিনী;
- বিমান বাহিনী;
- বাংলাদেশ রাইফেলস্
- পুলিশ বাহিনী;
- ব্যাটালিয়ান আনসার
গ্রাম প্রতিরক্ষা দলের (ভিডিপির) প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য
- দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে জনকল্যাণমূলক কাজে অংশ গ্রহণ করা;
- আইন শৃংখলা ও জননিরাপত্তামূলক কাজে সহায়তা প্রদান করা;
- সরকার কর্তৃক, সময় সময়, নির্ধারিত যে কোন দায়িত্ব পালন করা৷
- সরকার কর্তৃক প্রণীত নীতিমালা এবং তত্কর্তৃক, সময় সময়, প্রদত্ত নির্দেশ ও আরোপিত শর্ত সাপেক্ষে গ্রাম প্রতিরক্ষা দলের সদস্যগণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ বহন ও ব্যবহার করিতে পারিবে৷
- সামাজিক উন্নয়নের কাজ করা এবং
- স্বেচ্ছা সেবার কাজ করা।
আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর বেতন, গ্রেড এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা কি কি?
জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ এর হিসাব অনুযায়ী ব্যাটালিয়ন আনসার দের বেতন গ্রেড ছিল ১৮ তম এবং বেতন স্কেল ৮৮০০-২৩৩১০ টাকা। পরবর্তিতে অর্থ বিভাগ বাস্তবায়ন অনুবিভাগ কর্তৃক উন্নীত বেতন গ্রেড ১৭ তম এবং উন্নীত বেতন স্কেল ৯০০০-২৩১৮০০ টাকা।
তবে কখনও প্রশিক্ষন শেষে অঙ্গিভুত হওয়ার পরে ক্যাটাগরি ভেদে এদের মাসিক বেতন ভাতা সমতল এলাকায় ১৬২০০ এবং পার্বত্য এলাকায় ১৭৪০০ টাকা দেওয়া হয়। প্রতি বছরে ২ টি উৎসব ভাতা প্রদান করা হয়। দুই ইউনিট রেশন, ভর্তুকি মুল্যে প্রদান করা হয়। যাবতীয় সিংহ ভাগ ই সরকারি নিয়ম অনুযায়ী চালিত হয়।
এছাড়া কর্তব্যরত অবস্থায় মৃত্যুবরন করলে ৫ লক্ষ টাকা এবং স্থায়ী পঙ্গু হয়ে গেলে ২ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।